স্পিনিং ও ওয়াইন্ডিং বিভাগ হতে প্রাপ্ত সুতায় তৈরি ওয়াপাস বিম দ্বারা সরাসরি উইভিং করা যায় না। সুতার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আঁশ বাইরের দিকে বের হয়ে থাকে। এছাড়া ঝাঁপ ও চক্ষু দ্বারা শেড গঠনের জন্য টানা সুতা বারবার ঘষা খায়। ফলে এর হেয়ারিনেস বৃদ্ধি পায় ও সুতার শক্তি কমে যায়। অনেক সময় সুতার পাঁক কম থাকে, সুতা দুর্বল থাকে যার কারণে তাঁতের বিভিন্ন মোশন, ঝাঁপের ওঠানামা মাকু -এর ঘর্ষণ সহ্য করতে পারে না। ইত্যাদি কারণে উইভিং করার সময় টানা সুতা ছিঁড়ে যায়, উৎপাদন ব্যাহত হয়। উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়, কাপড়ও ত্রুটিপূর্ণ হয়। উপরোক্ত অসুবিধাসমূহ দূর করার জন্য ওয়াপাস বিমের টানা সুতায় মাড় দেওয়া হয়। মাড় প্রকরণে প্রাথমিক উদ্দেশ্য হলো টানা সুতার ন্যূনতম কোনো ক্ষতি সাধন না করে কাপড় বয়ন অর্থাৎ উইভিং করা। মাড় প্রকরণ সুতা ও কাপড়ের বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করে কাপড়ের দৃঢ়তা ও ওজন বৃদ্ধি করে। সর্বোপরি সুতার শক্তি ও মসৃণতা বৃদ্ধি করে টানা সুতা ছেঁড়ার হার কমিয়ে দেয়।
মাড়ের সংজ্ঞা
টানা সুতার শক্তি বৃদ্ধি ও অন্যান্য গুণাগুণ বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে বিমিং করা টানা সুতায় মসৃণ করার উদ্দেশ্যে আঠালো পদার্থ দ্বারা মসৃণ করা হয়। উক্ত আঠালো পদার্থসমূহকে মাড় বলে।
মাতৃপ্রকরণের সংজ্ঞা
টানা সুতার শক্তি বৃদ্ধি ও ঘর্ষণজনিত কারণে সুতা ছেঁড়ার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য বিমিং করা টানা সুতার পৃষ্ঠব্যাপী আঠালো পদার্থ দ্বারা মসৃণ করার প্রণালিকে মাড় প্রকরণ বা সাইজিং বলে।
সাইজিং -এর উদ্দেশ্য
১. টানা সুতার ঘর্ষণজনিত প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা।
২. টানা সুতাকে কোমল, মসৃণ ও উজ্জ্বল করা।
৩. টানা সুতার বাইরের দিকে বেরিয়ে থাকা ভাসমান আঁশগুলো সুতার পৃষ্ঠে লাগিয়ে দিয়ে সুতাকে মসৃণ করা ও শক্তি বৃদ্ধি করা।
৪. দুর্বল ও কম শক্তিসম্পন্ন সুতাকে ব্যবহার উপযোগী করা।
৫. সুতার উপর প্রতিরোধকারী পাতলা আবরণ দেওয়া।
৬. সুতার শক্তি বৃদ্ধি করা।
৭. সুতার ওজন বৃদ্ধি করা।
৮. পলিয়েস্টার মিশ্রিত সুতায় যে স্থির বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয় তা হ্রাস করা।
মাড়ের উপাদানসমূহ
মাড় বা সাইজ তৈরির জন্য বিভিন্ন উপাদানের প্রয়োজন। প্রতিটি উপাদানেরই আলাদা আলাদা গুণাগুণ রয়েছে। সুতার গুণাগত মান ও প্রকারের উপর নির্ভর করে বিভিন্ন প্রকার মাড়ের উপাদান প্রয়োগ করা হয়। নিম্নে মাড়ের উপদানসমূহ উল্লেখ করা হলো।
১) শ্বেতসারযুক্ত উপাদান (Adhesive substance)
2) সফেনিং এজেন্টস (Softening Agents )
৩) হাইগ্রোসকোপিক এজেন্টস (Hygroscopic Agents )
৪) অ্যান্টিসেপটিক এজেন্টস (Anticeptics )
৫) নিউট্রালাইজিং এজেন্টস (Neutralizing Agents )
৬) অ্যান্টিফোমিং এজেন্টস (Antifoaming Agents )
৭) টিনটিং বা রঞ্জক উপাদান (Tinting of Colouring Agents )
৮) ওয়েটিং এজেন্টস (Weighting Agents)
উপাদানসমূহের বিবরণ
শ্বেতসারযুক্ত উপাদান (Adhesive substance)
একে মাড়/সাইজের মূল উপাদানও বলা হয়। এ উপাদানের জন্য মাড় আঠালো হয় । এ শ্বেতসারযুক্ত উপাদানের সাথে পানি মিশ্রিত করে তাপ প্রয়োগ করলে আঠালো পদার্থের পেস্ট (Paste) এ পরিণত হয়। উদাহরণ: মেইজ স্টার্চ (Maise starch), তেঁতুলের বিচির পাউডার (Tamarind seed powder), টপিওকা স্টার্ট (Topioca starch), ময়দা (Flour), সাগু স্টার্চ (Sagoo starch), আলুর প্যালো (Potato starch), রাইচ স্টার্চ (Rice starch) ইত্যাদি প্রাকৃতিক স্টার্চ।
আবার সিএমসি (Carboxy Methyl Cellulose), পিভিএ (Polyvenyle Alcohol), পলিঅ্যাক্রাইলিক অ্যাসিড ইত্যাদি কৃত্রিম স্টার্চ বা অ্যাডহেসিভ ।
সফেনিং এজেন্টস (Softening Agents)
সফেনিং এজেন্টকে কোমল রাখার উপাদানও বলা হয়। টানা সুতা কখনও কখনও শক্ত, অমসৃণ ও ভঙ্গুর হয়। এছাড়া সুতার খসখসে ভাব ও নমনীয়তা দূর করার জন্য সফেনিং এজেন্ট ব্যবহার করা হয়। উদাহরণ: মাটন ট্যালো (Mutton tallow), টেলটেক্স (Teltex), নারিকেল তেল (Coconut oil), ক্যাস্টর অয়েল, তিলের তেল, তালের তেল, তুলার বীজের তেল, জলপাই এর তেল, রেড়ির তেল, প্যারাফিন ওয়াক্স (Parafin wax), চায়না মোম (China wax), সুগার ক্যান ওয়াক্স ( Sugarcane wax), ওয়াক্স (Wax), সফট সোপ (Soft soap) ইত্যাদি।
হাইগ্রোসকোপিক এজেন্টস (Hygroscopic Agents )
সুতাকে আর্দ্র রাখার জন্য হাইপ্রোসকোপিক এজেন্ট ব্যবহার করা হয়। আর্দ্র রাখার উপাদানসমূহ বাতাস হতে জলীয় বাষ্প গ্রহণ করে থাকে। এ এজেন্টস ব্যবহার করার ফলে টানা সুতা অপেক্ষাকৃত বেশি পরিমাণ আর্দ্রতা শোষণ করে সুতাকে নমনীয় রাখতে সাহায্য করে। উদাহরণ: ম্যাগনেসিয়াম ক্লোরাইড (MgCl2), ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড (CaCl2), গ্লিসারিন, জিঙ্ক ক্লোরাইড (ZnCl2), ডাই ইথিলিন গ্লাইকল, সরবিটল ইত্যাদি।
অ্যান্টিসেপটিক এজেন্টস (Anticeptics)
একে বাংলায় প্রতিষেধক উপাদান বল হয়। মিলডিউ অর্থাৎ ছত্রাক আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য প্রতিষেধক উপাদান ব্যবহার করা হয়। সাধারণত সমস্ত স্টার্চই ছত্রাক দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
কাজেই কার্বন সুতা সাইজিং করার প্রয়োজনে স্টার্চ -এর পাশাপাশি অ্যান্টিসেপটিকস প্রয়োগ করার প্রয়োজন হয়।
উদাহরণ: জিঙ্ক ক্লোরাইড (ZnCl2), কপার সালফেট (CuSO4), সেলিসাইটিক অ্যাসিড (CH (OH) COOH), সোডিয়াম সিলকো ক্লোরাইড, বিটা নেপথলস, কার্বোলিক অ্যাসিড ইত্যাদি।
নিউট্রালাইজিং এজেন্টস (Neutralizing Agents)
মাড় দ্রবণ প্রস্তুত করার সময় দ্রবণের pH মাত্রা পরিবর্তিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কাজেই দ্রবণকে নিউট্রাল করার জন্য নিউট্রালাইজিং এজেন্টস যোগ করা হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত দ্রবণের pH মাত্রা ৬.৮ না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত অল্প অল্প করে এ এজেন্টস ব্যবহার করা হয়। উদাহরণ: সোডা অ্যাশ।
অ্যান্টিফোমিং এজেন্টস (Antifoaming Agents )
মাড় দ্রবণ অথবা মাড় পেস্ট প্রস্তুত করার সময় দ্রবণে ফেনা হবার সম্ভাবনা দেখা যায়। যার ফলে উক্ত দ্রবণ টানা সুতায় প্রয়োগ করতে অসুবিধার সৃষ্টি হয়। এ জন্য মাড় দ্রবণে অ্যান্টিফোমিং এজেন্টস ব্যবহার করা হয়। যা মাড়, পেস্ট বা দ্রবণে ফেনা উৎপন্ন হতে বাধা প্রদান করে। উদাহরণ: অ্যাসিটিক অ্যাসিড (CH3COOH), কেরোসিন, টার্পেন্টাইন, পাইন অয়েল, অ্যামাইল, অ্যালকোহল, সিলিকন ডিফোমার ইত্যাদি।
টিনটিং বা রঞ্জক উপাদান (Tinting of Colouring Agents )
টানা সুতা ও উৎপাদিত কাপড়ের প্রাকৃতিক রংকে নিউট্রালাইজড করার জন্য এ এজেন্ট ব্যবহৃত হয়। সাধারণত যে সমস্ত কাপড় গ্রে অবস্থায় বিক্রি হবে উক্ত কাপড় প্রস্তুত করতে টানা সুতায় মাড় দেওয়ার সময় টিনটিং এজেন্ট প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। উদাহরণ : টিনাপল (Tinapol) আলট্রা মেরিন ব্লু, অ্যাসিড ডাই ও অপটিক্যাল ব্রাইটেনিং এজেন্ট ইত্যাদি।
ওয়েটিং এজেন্টস (Weighting Agents)
সুতা ও উৎপাদিত কাপড়ের ওজন বৃদ্ধি করার জন্য যে পদার্থ ব্যবহার করা হয় সেগুলোই ওয়েটিং এজেন্ট। শুধু গ্রে অবস্থায় বিক্রি করার জন্যই এ ধরনের এজেন্ট ব্যবহার করা হয়ে থাকে। উদাহরণ: চায়না ক্লে (China clay), চক বা খড়িমাটি (CaCO3), ফ্রেঞ্চ চক (French Chalk), ম্যাগনেসিয়াম সালকেট (MgSO4), সোডিয়াম সালফেট (Na2SO4), ম্যাগনেসিয়াম ক্লোরাইড (MgCl2) ইত্যাদি।
সাইজিং পদ্ধতির শ্রেনিবিভাগ-
সাইজ-এর প্রয়োগ পদ্ধতি ও ড্রাই পদ্ধতির ওপর ভিত্তি করে সাইজিং মেশিনকে শ্রেণিবিভাগ করা হয় । সাইজিং পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে সাইজিং মেশিনসমূহকে চার ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
১) সিলিন্ডার ড্রাইং (Cylinder drying )
ক) দুই সিলিন্ডার বিশিষ্ট (Two cylinder type)
খ) বহু সিলিন্ডার বিশিষ্ট (Multi cylinder type)
২) হট এয়ার ড্রাইং (Hot air dyeing)
৩) ইনফ্রারেড ড্রাইং (Infrared dyeing)
৪) কম্বাইন্ড পদ্ধতি (Combind system)
প্রয়োগ পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে মাড়করণ বা সাইজিং এ নিম্নলিখিত পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। যথা-
১) টেপ অথবা স্লেশার সাইজিং (Tape or Slasher sizing )
২) হট মেল্ট সাইজিং (Hot melt sizing )
৩) হাই প্রেসার সাইজিং (High pressure sizing )
8) ফোম সাইজিং (Foam sizing )
৫) সলভেন্ট সাইজিং (Solvent sizing )
৬) ইলেকট্রোস্ট্যাটিক সাইজিং (Electrostatic sizing )
৭) পলিমার ইমালশন সাইজিং (Polymer emulsion sizing )
৮) কম্বাইন্ড সাইজিং (Combind sizing )
সাইজিং-এর সময় গৃহীত সতর্কতাসমূহ
সাইজিং-এর সময় নিম্নলিখিত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
আরও দেখুন...